জ্ঞানগঞ্জ ও সূর্য-বিজ্ঞান


ভগবান বুদ্ধ তাঁর অন্তিম সময়ে কালচক্র সম্বন্ধে জানিতে পারেন। তাঁর এই জ্ঞান তিনি অনুগত শিষ্য সকলের মধ্যে দান করিয়া ছিলেন। বজ্রযান বৌদ্ধধর্মানুসারে শম্ভালের প্রথম ধর্মরাজা সুচন্দ্র, গৌতম বুদ্ধের নিকট ‘কালচক্র-তন্ত্র’ সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করিয়া ছিলেন। এই তন্ত্রের সাধনা করিয়া শম্ভাল একটি বোধিপ্রাপ্ত সমাজে পরিণত হইয়াছিল বলিয়া প্রবাদ প্রচলিত রহিয়াছে। তিব্বতের এই স্থানটিকে শম্ভালা বলা হইয়া থাকে। শম্ভালা অর্থ লইল, – ‘খুশির স্রোত’ বা আনন্দ ধারা। এই স্থানটি আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্র। কেহই এই স্থানটি সঠিক রূপে নির্ধারণ করিতে পারেনা। বৌদ্ধ সাধকগণ সাধন সিদ্ধিলাভ দ্বারা এই স্থানে পৌঁছাইতে পারেন। প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে মানচিত্রে এই স্থানের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয় নাই। ফ্রান্স, অ্যামেরিকা, রাশিয়া প্রভৃতি বিশ্বের বহু দেশের বৈজ্ঞানিকগণ বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিবার পর অনুসন্ধান করিয়া দেখিয়াছেন যে, মানব শরীরে যদি নতুন নতুন কোষ উৎপন্ন হইতে থাকে এবং কোনো প্রকারে মানব শরীরে হর্মোন গুলিকে যদি ইচ্ছা শক্তিদ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সুস্থ-সবল থাকে তাহা হইলে মানুষ সহস্র বৎসর বাঁচিয়া থাকিতে সক্ষম হইবে। এটি ভারতীয় আয়ূর্বেদ শাস্ত্রেও লিখিত রহিয়াছে। জ্ঞানগঞ্জের যোগি ও যোগিনীগণ নিজদিগের আবেগ গুলিকে নিয়ন্ত্রিত করিয়া শারীরিক সৌন্দর্য্য ও যৌবনকে স্থির রাখিতে সক্ষম হন এমনকি বয়ঃবৃদ্ধি রোধ করিয়াও দেন। আধুনিক বিজ্ঞানে আবেগ নিয়ন্ত্রিত করিবার কোনো পদ্ধতি আবিস্কৃত হয় নাই, সে কারণে জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করা বিজ্ঞান দ্বারা সম্ভবপর হয় না। এই সুন্দর হিমালয় পর্ব্বতমালার মধ্যেই লুক্কায়িত রহিয়াছে এই ‘জ্ঞানগঞ্জ’-মঠটি।

‘জ্ঞানগঞ্জ’-মঠটি মানুষের মধ্যেও রহিয়াছে, এই স্থানটি কোনো বিশেষ ধর্মীয় মতাবলম্বি দিগের জন্য নহে, নিজ সাধনার যোগ্যতা দ্বারা এই মঠটিকে খুঁজিয়া লইতে হয়। ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ড-এর একজন ইংরেজ উপন্যাসিক, ‘James Hilton’ এই স্থানটিকে অনুভব করিয়াছিলেন এবং তাঁর লিখিত ‘Lost Horizon’- বইটির জন্য বিখ্যাত হইয়াছিলেন এবং, বইটি ছিল আন্তর্জাতিক দারুণ বিক্রীত (bestseller)।   

তিব্বতীয় গুরুগণ মনে করিয়া থাকেন, – যখন পৃথিবী প্রলয় কালের সম্মুখিন হইবে তখন শম্ভালা বা সিদ্ধাশ্রমের গুরুমণ্ডলী দ্বারা এই পৃথিবীর জীবের উদ্ধার এবং সংরক্ষণ সাধিত হইবে।

বজ্রযান বৌদ্ধধর্মে শম্ভাল নামক রাজ্যে বত্রিশজন শাসকের উল্লেখ পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে প্রথম সাত জন শাসক ধর্মরাজা (Truth Kings), এবং শেষ পঁচিশজন শাসক কল্কিরাজা (Kalki Kings) নামে পরিচিত।

এই স্থানে পৃথিবীর সকল জীবের ভাগ্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হইয়া থাকে। জ্ঞানগঞ্জে কাহারো মৃত্যু হয় না। এই স্থানে বসবাসকারী সন্ন্যাসীদিগের বয়স বৃদ্ধি-প্রাপ্ত হয় না। এই আশ্রমের সময় যিনি রুদ্ধ করিয়া দিয়াছেন সেই সন্ন্যাসী অদ্যাবধি ধ্যানে মগ্ন রহিয়াছেন। স্থান-কালের বা চতুর্মাত্রিক দেশ-কালের উর্দ্ধে এই ভূমি। স্থূল চক্ষুদ্বারা এই ভূমি দৃষ্ট হয় না। সাধন-সিদ্ধ সাধক বা সাধিকা গণই একমাত্র সূক্ষ্ম-শরীরে এই ভূমিতে পৌঁছাইতে পারেন, তাও শ্রী শ্রীমৎ জ্ঞানানন্দ পরমহংস যিনি, গুপ্তানন্দ নামে পরিচিত, তাঁহার অনুমতি ব্যাতিত কেহই এই ভূমিতে প্রবেশ করিতে পারেন না।

শ্রী শ্রীমৎ জ্ঞানানন্দ পরমহংস হইলেন এই মঠের প্রশাসক। শ্যামানন্দ পরমহংস হইলেন বিজ্ঞানী। যোগি বিশুদ্ধানন্দ যিনি ভোলানাথ নামে পরিচিত, ইঁনি শ্যামানন্দ পরমহংসের নিকট হইতে সূর্য-বিজ্ঞান বা ‘Solar Science’ – এর জ্ঞান লাভ করিয়াছেন।

এই ভূমিতে প্রবেশ করিতে হইলে প্রথমে একটি গুহা-মুখে প্রবেশ করিতে হয়। গুহার মুখ হইতে  আধ্যাত্মিক দিব্য জ্যোতিঃ সর্ব্বদা বিচ্ছুরিত হইতেছে। পর্বতবেষ্টিত একটি উপত্যকার মাঝে সাত মাইল বিস্তৃত এই আশ্রম। চতুর্দিকে দিব্য-তরল (চন্দ্রামৃত) পূর্ণ পরিখা, দেখিতে জ্যোতির ন্যায়। যাতায়াতের জন্য রহিআছে একটি ধনুরাকার ‘সেতু’। আশ্রমটি শিক্ষার ক্রম-অনুসারে স্তরে স্তরে সজ্জিত রহিয়াছে। প্রথম জ্ঞানগঞ্জ মঠ, দ্বিতীয় গুপ্ত সিদ্ধ-বিজ্ঞান আশ্রম ও তৃতীয়টি নিষ্কল সিদ্ধাশ্রম।

‘মহাচীনদেশ’- বলিতে অন্তর্জগতে আজ্ঞাচক্র (এই চক্রই হইল, গুপ্তআশ্রম, ইহাই কলা, ইহাই শাম্ভবী-যোগ ক্ষেত্র)- এবং, ইহার উর্দ্ধে যে ‘দ্বাদশান্ত’ বা দ্বাদশটি চক্র রহিয়াছে। 

চক্রগুলির ক্রম; –

‘হ’, ‘র’, ‘ঈ’, বিন্দু, 

অর্ধচন্দ্র, রোধিনী, নাদ, নাদান্ত, শক্তি, ব্যাপিকা, সমনা এবং উন্মনা। এই স্থানে দ্বাদশটি স্তরে সকল গুরুগণ নিত্য বর্তমান রূপে অবস্থান করিতেছেন।

Published by BIOS2018

I, Dr. Asis Kumar Ray, founder President of Bengal Institute of Oriental Studies.

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: