তন্ত্র – ‘তন’ ধাতুর উত্তর ‘ত্র’ প্রত্যয় যোগে ‘তন্ত্র’ শব্দ সৃষ্টি হইয়াছে। “তনু বিস্তারে”। তন্ ধাতুর অর্থ বিস্তারিত হওয়া। ত্র- প্রত্যয়ের অর্থ ত্রাণ করা। ‘তন্ত্র’ জীবনকে এমন ভাবে বিস্তারিত করে যে, এই পথের সকল সাধক সমস্থ দুঃখ হইতে ত্রাণ লাভ করে। শিবশক্তি-প্রক্ত সাধন বিষয়ক সকল শাস্ত্রই তন্ত্র নামে অভিহিত। তান্ত্রিক সাধনায় জাতি-বর্ণনির্বিশেষে সবারই অধিকার আছে।
“যদা সা পরমা শক্তিঃ স্বেচ্ছয়া বিশ্বরূপিণী ।
স্ফুরত্তামাত্মনঃ পশ্যেত্তদা চক্রস্য সম্ভবঃ”।।
- যখন সেই পরমা শক্তি স্বেচ্ছায় বিশ্বরূপিণী হয়ে নিজের স্ফুরত্তা অবলোকন করেন তখন চক্রের উৎপত্তি হয়।
বেদসূক্তে বর্নিত ‘দ্যাবাপৃথিবী’ মিথুনের কথা সকলেই অবগত আছেন। তন্ত্রে ইহাই শিব-শক্তি তত্ত্ব বা বিন্দুর বিসর্গ লীলা।
ব্রহ্মযোনিই ভগবানের স্বশক্তি, ইহার নিজস্ব কোন কামনা বা সঙ্কল্প নাই, কিন্ত্তু, জীবের সিসৃক্ষায় পরিস্পন্দিত হয়ে জাগ্রত হয় সঙ্কল্প, তখনই শক্তি ক্রিয়াবতী হন, ইহাই তাঁহার গর্ভধারণ।
সিসৃক্ষায় পরিস্পন্দিত হয়ে উথলে ওঠে সত্তা চৈতণ্য শক্তি, নিরাকার ব্রহ্ম ‘আ’ কার যুক্ত হয়ে ব্রহ্মা (সৃষ্টি কর্ত্তা) হন্, তাঁর মধ্যে জন্ম নেয় ‘ক্রোধ’, সেই ক্রোধ-দীপ্ত ভ্রূকুটি কূটিল ললাট থেকে মধ্যাহ্ন-সূর্যের সমান প্রভার অর্ধ-নারী-নর বপু প্রচন্ড ‘রুদ্র’ উৎপন্ন হয়। অহং জ্ঞান বিশিষ্ঠ আত্মা নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত ক’রে। তখনই শুরু হয় ‘বিন্দুর বিসর্গ লীলা’।
“ত্বং বৈষ্ণবীশক্তিরনন্তবীর্য্যা, বিশ্বস্য বীজং পরমাসি মায়া।
সম্মোহিতং দেবি সমস্তমেত, – ত্ত্বং বৈ প্রসন্নাভুবিমুক্তিহেতুঃ”।। – শ্রীশ্রী চন্ডী ১১/৫
- হে দেবি! তুমিই অসীম সামর্থ্য সম্পন্না বৈষ্ণবী শক্তি, তুমিই চরাচর জগতের মূল কারণ, তুমিই পরমা মহামায়া, তুমিই এই নিখিল জগৎকে সংসার-গর্ত্তে নিপাতিত করিতেছ। আবার, প্রসন্ন হইলে তুমিই সংসারে মুক্তির কারণ হইয়া থাক, অর্থাৎ, তুমি যাহার প্রতি প্রসন্না, তাহার এই সংসার মায়া হইতে মুক্তি লাভ হইয়া থাকে।
মূলাধার চক্র হইতে আজ্ঞা চক্র, – এই ছয়টি চক্র বা ষট-চক্র। ষট্-চক্রের প্রতিচক্রে একটি ঊর্দ্ধস্থ ও একটি অধঃস্থ এই দুইটি গ্রন্থি আছে, অর্থাৎ, ষট্-চক্রে মোট দ্বাদশ গ্রন্থি বা শক্তিচক্র আছে। অথবা, বলা যায় যে, পরাশক্তির এই ছয়টি ব্যাক্তাংশ শক্তির পরস্পর সংঘট্ট হইতে দ্বাদশ শক্তির বিকাশ হইয়া থাকে। উক্ত দ্বাদশ শক্তি-কেন্দ্রের যুক্তাবস্থা দ্বারা সৃষ্ট চক্রই ‘কালচক্র’, ইহা ঘোর রূপা শক্তি।
কালচক্র ও কালাতীত চক্র, এই দুই চক্রই বিসর্গ শক্তির প্রকাশ। ললাটের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ, আজ্ঞাচক্রের ঊর্ধ্বে দ্বাদশান্ত বা ‘কালাতীতচক্র’ নামক দ্বাদশকলাত্মক সূর্যবিম্ব বিদ্যমান।
জীব যখন ‘মল’ মুক্ত হইয়া মহাবিদ্যার প্রসাদে পরশিব প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ষট্-চক্র ভেদ পূর্বক শিব-শক্তি সামরস্য রূপ স্থির পাদুকা প্রাপ্ত হইয়া থাকে, তখন ঘোররূপা মায়াশক্তি সাধকের নিকট অঘোর রূপে দেখা দিয়া থাকেন। তখন সাধককে আর কর্মবন্ধনে বাঁধা পড়িতে হয় না।
“কুলং শরীরং মহাপ্রয়োজনহেতুতয়া জ্ঞেয়ং যেষং তে কৌলাঃ”।।
- কুল অর্থে শরীর। মহাপ্রয়োজনহেতুরূপে তা যাঁদের জ্ঞেয় তাঁহারা কৌল। তাঁদের আচার কৌলাচার।
ললাটের ঊর্ধ্বে অঙ্গুলিবিস্তৃত স্থানকে বলা হয় দ্বাদশান্ত, ইহাতে দ্বাদশকলাত্মক সূর্যবিম্ব বিদ্যমান। দ্বাদশ কলাযুক্ত এই চক্রকে বিশ্বোত্তীর্ন ‘মহাকাল’ চক্র বলা যাইতে পারে, এই স্তরটি অকুল বা শিবের ক্ষেত্র। অপর পক্ষে, সুষুম্না কান্ড মধ্যে মুলাধার হইতে আজ্ঞাচক্র পর্যন্ত ছয়টি চক্র, ষটচক্রের প্রতিচক্রে একটি ঊর্ধ্বস্থ এবং একটি অধঃস্থ এই দুটি গ্রন্থি আছে, অর্থাৎ, দ্বাদশ সংখ্যক গ্রন্থি দ্বারা গঠিত পূর্ণচক্রকে বিশ্বগত ‘কালচক্র’ বলা হইয়া থাকে। কালচক্র হইল জীবের সংসার মায়া নামক বক্র পথ, এই স্তরে বিরাজ করছেন আদ্যাশক্তি মা ‘কালী’।
I want to learn French.
Thank you very much.
LikeLike