সদ্ গুরুর আশ্রিত বিবেকী শিষ্যের পক্ষে কর্ম্মতত্বটির এই গহন রহস্য অবধারণ করা অপেক্ষাকৃত সহজতর। কেননা এইরূপ আশ্রিত শিষ্য প্রথমতঃ উপলব্ধি করেন – শ্রীগুরু চরণে
আত্মসমর্পণ করার পর হতে তার যাবতীয় কাজকর্ম্ম, আশা – আকাঙ্খা তার সেই আশ্রয়দাতা সদ্ গুরুর আদেশ – নির্দেশেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।অর্থাৎ , যন্ত্রীরূপে তিনি তাঁকে দিয়ে সবকিছু করিয়ে নিচ্ছেন। সুতরাং , সেই সমস্ত কর্ম্মের ফলাফলের জন্য তার আর চিন্তা ভাবনা কি ?
এই অবস্থায় শিষ্য তার দেহেন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুষ্ঠিত যাবতীয় কর্ম্মের মধ্যে ‘অকর্ম্ম’ দর্শন করেন এই তত্বটি বোঝাবার জন্য সঙ্ঘনেতা আচার্য্য প্রণবানন্দ তাঁর আশ্রিত সন্তানগণকে লক্ষ্য করে বলতেন — “শরীরটি সঙ্ঘের কাজকর্ম্মে পৃথিবীময় ঘুরিয়া বেড়াইবে , কিন্তু মনটি পড়িয়া থাকিবে একস্থানে – সদ্গুরুর চরণমূলে।” বস্ততঃ,গুরুর কৃপায় শিষ্য তখন সত্যসত্যই উপলব্ধি করতে পারেন, 'আমি কর্ম্ম করি' এইরূ
অভিমান যেমন বন্ধনের কারণ,’ আমি কর্ম্ম করি না’ – এইরূপ অভিমানও তেমনই বন্ধনের হেতু।
কারণ, যতদিন মনে আমিত্বের বিন্দুমাত্র অভিমান ও ফলাশক্তি বিদ্যমান থাকে ততদিন কর্ম্ম করলেও যেমন বন্ধন হয় , কর্ম্ম না করে নিশ্চেষ্ট ভাবে বসে থাকলেও তেমনি কর্ম্মবন্ধনের আশঙ্কা থাকে। কেননা, এইরূপ নিশ্চেষ্ট অবস্থায় কর্ম্মক্ষয় না হয়ে বরং তমোভাব শতগুণ বর্দ্ধিত হয়ে তার কর্ম্মবন্ধন আরও দীর্ঘস্থায়ী ও দৃঢ়তর করে তোলে।সুতরাং, সর্ব্বাবস্থায় সদ্গুরুর নির্দ্দেশ মত চলা ও কর্ম্মকরাই কর্ম্মবন্ধন হতে মুক্তিলাভের সহজ ও সরল উপায়।
“যস্য সর্ব্বে সমারম্ভাঃ কামসংকল্পবর্জ্জিতাঃ
জ্ঞানাগ্নিদগ্ধকর্ম্মাণং তমাহুঃ পণ্ডিতং বুধা।।” ১৯ অনুবাদ - যাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ও কামনা আশক্তিবর্জ্জিত, জ্ঞানরূপ অগ্নির দ্বারা যাঁর কর্ম্ম -
সমূহ দগ্ধ হয়েছে সেরূপ ব্যক্তিকে জ্ঞানীগণ পণ্ডিত বলে অভিহিত করেন।
– স্বামী অদ্বৈতানন্দজী মহারাজ। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা) ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ।