কালচক্র পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণাটি বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড (microcosm) এবং, জীবাত্মা (macrocosm) পরিচিতির এক অতি-প্রাচীন ধারণা। কালচক্র জ্ঞান আমাদের জীবাত্মা (soul) এবং মহাজাগতিক (cosmic) শক্তির একটি সমন্বয় সাধন করে থাকে এবং, দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তির পথ দেখায় (liberation from suffering)।
“কাল” অর্থে সময় এবং, “চক্র” অর্থে গোলাকৃতি মণ্ডল বা বৃত্ত। আমরা জানি যে, একটি বৃত্তের পরিধি ৩৬০ ডিগ্রী। আমাদের রাশিচক্র অথবা সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডকে একটি চক্রাকার দেশ (space) বা স্থান হিসাবে আমরা দেখতে পারি। এই দেশ (space)-কে আমরা দ্বি-মাত্রিক (2D) রূপে আঁকতে পারি আবার, ত্রি-মাত্রিক (3D) রূপে দেখতে পারি। আমরা একটা সাদা কাগজে যখন কোনো বৃত্ত অঙ্কন করি তখন তা “দ্বি-মাত্রিক” আর, চোখের সামনে আমরা যা কিছু দেখছি তা সমস্থই “ত্রি-মাত্রিক”। অর্থাৎ, যে সমস্ত দৃশ্যমান বস্তুর দৈর্ঘ-প্রস্থ-বেধ পরিমাপ করা যায় তাকে “ত্রি-মাত্রিক” বলা হয়। তাহলে, আমরা “দেশ” (space) বা স্থান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পেলাম।
এখন আমরা “কাল” (time) বা সময় সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করবো। “কলয়তি ইতি কালঃ”।। – অর্থাৎ, যাহা রূপধারণ করে, যাহা কলা বিস্তার করে, – যাহার কলন আছে তাহাই “কাল”। ‘কাল’ বা সময়কে আমরা তিন ভাগে বিভক্ত রূপে ধারণা করি যথা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ। “বর্তমান” হলো নিত্য এবং “উত্তম পুরুষ”। যখন আমরা “দেশ” (space) বা স্থানকে খণ্ড খণ্ড রূপে বিভক্ত করি তখনই আমাদের “কাল” (time) বা সময় রূপ intuitive concept বা স্বজ্ঞামূলক ধারণার উদ্ভব হয়। অর্থাৎ, কাল বা সময় হলো – আমাদের মনের একটি ধারনা যাহা আমাদের স্মৃতি শক্তির উপর নির্ভরশীল। সে কারণে মনের গতির উপর নির্ভর ক’রে সময়ের গতি। কাল বা সময় হলো বস্তুর ৪র্থ মাত্রা (4th dimension), এবং, সময় হ’ল স্থান (space) এর ভগ্নাংশ। আর, আমাদের মনের গতি বা চঞ্চলতা নির্ভর ক’রে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতির উপর। শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পর যখন প্রথম শ্বাস গ্রহন করে ক্রন্দন করে ওঠে তখনই তার জীবনের শুরু (starting of life)- হয় এবং, যখন সেই মানুষ শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তখনই জীবনের শেষ (ending of life) বা এই দেহের মৃত্যু ঘটে। এই হ’ল আমাদের মানব জীবনের জন্ম-মৃত্যু নামক “কাল” বা সময়, যাকে আমরা জীবন-কাল (span of life)- বলি।
“লোকানামন্তকৃৎ কালঃ কালোহন্যাঃ কলনাত্মকঃ। স দ্বিধা স্থূল-সুক্ষ্মত্বান্মূর্তশ্চামূর্ত উচ্যতে”।। – “কাল” দ্বিবিধ প্রকার। পদার্থ সমূহের অন্তকারী যে কাল, উহা “মহাকাল”। আর, যাহা “কলনাত্মক” অর্থাৎ, জ্ঞানযোগ্য, আদি-অন্ত আছে তাকে “খণ্ডকাল” বলা হয়।
“কালচক্র” হল তিব্বতীয় তন্ত্র-যোগ-জ্যোতিষের এক বিস্তৃত জ্ঞানভাণ্ডার। বৌদ্ধ জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতে, ব্রহ্মান্ডের সম্পূর্ণ চক্রের চারটি শর্ত রয়েছে,- শূণ্য (বিন্দু), স্বরূপ (সৃষ্টি), অবধি (স্থিতি) এবং বিধ্বংস (লয়) । “কালচক্র” প্রাথমিক ভাবে তিনটি স্তরে সাজানো থাকে,- বহির্দ্দেশ (Outer / Physical Body) চক্র, অন্তর্দ্দেশ (Inner / Prana / Astral Body) চক্র এবং, বিকল্প পর্যায়ক্রমিক (other / Mind Body) চক্র।